২৩ জুন হল ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। আজ থেকে ২৫৭ বছর পূর্বে ১৭৫৭ সালে কিছু বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে বাংলার স্বাধীনতা প্রায় দু'শত বছরের জন্য ইংরেজদের কাছে চলে গিয়েছিল। সেই বিশ্বাসঘাতকদের করুণ পরিণতি তুলে ধরছিঃ
১. মীর জাফরঃ
ইংরেজ রবার্ট ক্লাইভের হাত ধরে মীর জাফর নবাব হলেও ১৭৬০ সালে সেই ইংরেজদের দ্বারাই অপসারিত হন। ছেলে মীরনের হত্যাকাণ্ডের পর মীর জাফর প্রায় একা হয়ে পড়েন। দূরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে সারা শরীরে পঁচন ধরে করুণ বীভৎস আর্তনাদে নিঃসঙ্গ কাটে তার শেষ জীবন। এভাবেই তার জীবনাবসান হয়। যেখানে তাকে কবর দেয়া হয় সে জায়গার নাম হয়- নিমক হারামের দেউড়ী বা বিশ্বাসঘাতকদের কবরস্থান।
২. ঘষেটি বেগমঃ
প্রাসাদ ষড়যন্তের অন্যতম ক্রীড়ানক ও বিশ্বাসঘাতক ছিল নবাব সিরাজুদ্দৌলার খালা ঘষেটি বেগম। নিজ ছেলে শওকত জংকে নবাবীতে বসাতে ব্যর্থ হয়ে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করতে মরিয়া ছিল ঘষেটি বেগম। তাকে মীর জাফরের ছেলে মীরন জিনজিরায় সিরাজের মা নিরপরাধ আমেনা বেগমের সাথে গৃহবন্দী করে রাখে। ১৭৬০ সালে দুই বোনকে একত্রে বজরা নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক ঘষেটি বেগমের সাথে নিরীহ নিস্পাপ আমেনা বেগমেরও সলিল সমাধি ঘটে।
৩. মীরনঃ
মীর জাফরের ছেলে মীরনকে ইংরেজরা পরিকল্পিতভাবে তাঁবুতে আগুন দিয়ে হত্যা করে বাইরে কামান চালিয়ে প্রচার করে যে, মীরনের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশ কিংবা কবরস্থানও মীর জাফরকে ইংরেজরা দেখায়নি।
৪. রাজবল্লভঃ
ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢাকার শাসক রাজবল্লভ কুচক্রী বিশ্বাসঘাতকদের অন্যতম সদস্য। ষড়যন্ত্রের সব সভাতেই রাজবল্লভ উপস্থিত ছিল। মীর কাশিমের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ নেয়ার অপরাধে মীর কাশিম রাজবল্লভকে গলায় বালির বস্তা বেঁধে গঙ্গায় নিক্ষেপ করে হত্যা করে।
৫. জগৎশেঠঃ
বাংলার অন্যতম ধনী পরিবার জগৎশেঠ পরিবার। ইংরেজদের সঙ্গে মীর জাফরের ষড়যন্ত্রের মধ্যস্থতা করে জগৎশেঠ পরিবার। মীর কাশিম নবাব হলে বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জগৎশেঠ পরিবারের সদস্য মহাতপ চাঁদকে গ্রেফতার করে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়। ইংরেজরা শেঠ পরিবারের পুরো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে বিশ্বাসঘাতক ধনী পরিবারের বিলুপ্তি ঘটে।
৬. উমিচাঁদঃ
শিখ ধর্মের অনুসারী পাঞ্জাবের আমিনচাঁদ বা উমিচাঁদ বিশ্বাসঘাতক, ধূর্ত ও প্রতারকদের অন্যতম। নবাব পরিবারের খুব কাছে থাকার সুবাদে পুরো গোপন সংবাদ ইংরেজদের কাছে পৌঁছে দিত উমিচাঁদ। ইংরেজদের সঙ্গে কোন এক ঘটনায় বিশ্বাসঘাতকতার জন্য গভর্ণর ড্রেক কলকাতায় তার বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয় এবং তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। ইংরেজরা প্রতারণার জন্য কথা মতো তাকে অর্থ দেয়নি। অর্থ লাভে প্রতারিত হয়ে উমিচাঁদ পাগল হয়ে মারা যায়।
৭. ইয়ার লতিফঃ
পলাশীর ষড়যন্ত্রের অন্যতম কৌশলী ইয়ার লতিফকে হত্যা করে লাশ ঘুম করে ফেলে ইংরেজ বাহিনী। যুদ্ধের পর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
৮. মীর কাশিমঃ
মীর কাশিম ষড়যন্ত্রকারী না হলেও পলাশীতে নবাবের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং পরবর্তীতে নবাবের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। পরে নবাবীতে বসলেও ইংরেজদের সঙ্গে বারবার বিরোধ এবং পরপর পাঁচটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজ্য ছেড়ে বিতাড়িত অবস্থায় আজমীরের পথের ধারে ভিখারী অবস্থায় মারা যান। ইংরেজরা তার কবরটিও ধ্বংস করে দেয়।
LINK
Where is the name of RAYDURLOBH ?
ReplyDelete