Tuesday, January 20, 2015

এবার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী : আতঙ্ক

Source LINK 

All these particularly the killing of Imrul Qayes, ward commissioner, Narail,deserves special investigation.
Shah Abdul Hannan
এবার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী : আতঙ্ক
আবু সালেহ আকন

রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশে আবারো শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সংঘর্ষ এবং সহিংস ঘটনায় হতাহত ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দীরাও প্রাণ হারাচ্ছেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’। বন্দী অবস্থায় নিহত এই ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহতের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। নিহতদের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে এই খুনের ঘটনা ঘটছে। গতকাল ভোরেও রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে নড়াইলের নির্বাচিত এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সরকারদলীয় সমর্থকদের গুলি, সংঘর্ষ এবং পেট্রলবোমায় আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে নিহতদের মধ্যে ১২ জন আগুনে পুড়ে এবং বাকি ১৫ জন নিহত হয়েছেন সংঘর্ষে সরকারদলীয় সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে। এর বাইরে গতকাল ভোরে রাজধানীর মতিঝিল থেকে উদ্ধার হয়েছে নড়াইলের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লাশ। রাজধানীতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোহন বেপারীকে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পুলিশের সাথে বিএনপির সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন রুবেল ও মহসীন নামের দুই বিএনপি কর্মী। স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রুবেল ও মহসীন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ৫ জানুয়ারি নাটোরের তেবাড়িয়া এলাকায় গুলিতে নিহত হয়েছেন ছাত্রদল নেতা রাকিব ও রায়হান। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারদলীয় সমর্থকেরা রাকিব ও রায়হানকে গুলি করে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এ নিহতের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সোমবার ভোরে নিহত হয়েছেন নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ইমরুল কায়েস (৩৪)। তিনি ওই ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। জানা গেছে, ওই রাতে কোর্টকাচারি এলাকার একটি মেস থেকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সে থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
গতকাল রাত সোয়া ৩টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব টিমের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইমরুল নিহত হন বলে জানা যায়। ঘটনার পর তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তিনি গত সপ্তাহে ঢাকায় আসেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। মিডিয়ায় তার নিহতের খবর পায় পরিবার।
নিহতের স্ত্রীর খালাতো ভাই অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নিহত ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি নড়াইলের দুর্গাপুর উপজেলায়। তিনি নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কমিশনার। তার বাবার নাম আনোয়ার মোল্লা। ইমরুল কায়েস বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম জান্নাতুল ফেরদাউস। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ইমরুল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা এলে তিনি রাজধানীর ওয়ারী এলাকার দক্ষিণ মৌসুন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের এক স্বজনের বাসায় থাকতেন। গত সপ্তাহে তিনি ঢাকায় আসেন। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি নিখোঁজ হন।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল ভেরে মতিঝিলের এজিবি কলোনির ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে চার-পাঁচজন যুবক একত্র হয়ে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। এমন সময় ডিবি পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গোলাগুলির পর অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি এবং অবিস্ফোরিত পাঁচটি হাত বোমা উদ্ধার করে পুলিশের দলটি। গোলাগুলিতে পুলিশের ১৭ রাউন্ড পিস্তলের এবং ২৩ রাউন্ড শর্টগানের গুলি খরচ হয়েছে। পরে লাশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায় মতিঝিল থানা পুলিশ।
গত ১৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট এলাকায় র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান (৩০)। ঘটনার পর র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ অভিযানে মতিউরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে র‌্যাব অভিযানে বের হলে মতিউরের সহযোগীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে মতিউর গুলিবিদ্ধ হন। তবে মতিউরের পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ দিকে, মতিউরের ব্যাপারে র‌্যাবের মিডিয়া উইং প্রধান মুফতি মাহমুদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, সে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সেটা বড় কথা নয়। আসল বিষয় হলো সে নাশকতার সাথে জড়িত ছিল। অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
কায়েসের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, তার বিরুদ্ধে নড়াইল থানায় ৯টি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালে নড়াইল সদর থানার মামলায় দায়েরকৃত মামলারও সে একজন আসামি।

No comments:

Post a Comment