Monday, May 4, 2015

মুক্তিযোদ্ধাদের বহু গ্রুপ ছিল, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ...

Source LINK 
তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন আওয়ামী বামদের সর্বোচ্চ নেতা। তবে নিউক্লিয়াসের বামরা মূলত ছাত্রলীগ থেকে কাজ করতো। আওয়ামীলীগের ভেতরে একটা ডান বনাম বাম দ্বন্দ আগে থেকেই ছিল। এই দ্বন্দের কারনেই প্রথমে মাওলানা ভাসানী সহ অনেক বাম বেরিয়ে এসে ন্যাপ তৈরি করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই দ্বন্দ ছিল তবে তা স্বাধীনতার পরেই প্রবল হয়েছে যার ফলে বামরা আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে জাসদ তৈরি করে। অন্যদিকে দল হিশাবে আওয়ামীলীগের সাথে ন্যাপ ও মাওবাদী অন্যান্য বামদের দ্বন্দ ও বিরোধীতার সম্পর্ক ছিল। মস্কোপন্থীদেরকেও আওয়ামীলীগ ভালো চোখে দেখতোনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরের সময়টায় মস্কোপন্থীদের সাথে আওয়ামীলীগের এক ধরনের ঐক্য হয়েছিল।
পূর্ব বাঙলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) ছিল আওয়ামীলীগের প্রধান শত্রু সংগঠনের একটি।
আপনি যে সময়ের কোট দিয়েছেন তা খুব সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার না। কারন মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু জেলখানায় ছিলেন এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে মোস্তাক আহমেদ গ্রুপ ছাড়া কেউ মার্কিন লবী মেইনটেইন করতেন না। তাজউদ্দীন থেকে শুরু করে মূলধারার আওয়ামীলীগ সেই সময় সোভিয়েত লবি মেইনটেইন করেছেন। মাঝখানে ভায়া ছিল সিপিবি। আর ছিল ভারত লবি। মাওবাদীদের এই অংশটা মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ভারত-রাশিয়ার তাবেদারির অভিযোগ আনে, মার্কিনীদের সাথে সম্পর্কের অভিযোগ না।








আর বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতা করলেই মুক্তিযুদ্ধ করা যাবেনা তা কিন্তু ঠিক না। মাওবাদীরা যেই ধারার রাজনীতি করতো তার সাথে আওয়ামীলীগের খুবি খারাপ সম্পর্ক ছিল। খুনাখুনি সম্পর্কও অনেক সংগঠনের সাথে। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব তারা মানবেনই এমন আশা করা দুস্কর। তাদের অনেকেই অবশ্য আওয়ামীলীগের সাথে ঐক্য করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে প্রতারিত হওয়া এবং খুন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এখন আওয়ামীলীগের সাথে হচ্ছেনা বলে কি মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবেনা? আলবত না। তাই তারা নিজেদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কারো কারো সাথে অবশ্য মুজিব বাহিনী এমন কি মুক্তি বাহিনীরও যুদ্ধ হয়েছে, কারন মাওবাদীদের কেউ কেউ মনে করতো ভারত থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় আগ্রাসনের হাতিয়ার। আওয়ামীলীগ একটু চেষ্টা করলে এই দ্বন্দের অবসান হতে পারতো। কিন্তু বড় দল হিশাবে তারা এইক্ষেত্রে কোন উদারতা দেখানোর পক্ষে ছিলেন না। খোদ তাজউদ্দীনই রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর আলী খান রনোর মতো গণতান্ত্রিক পিকিং পন্থীদেরও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে দিতে নারাজ ছিলেন। এমনকি সিপিবি ছাত্র ইউনিয়নকেও মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের জায়গা করে নিতে আওয়ামীলীগের সাথে জোর জবরদস্তি করতে হয়েছে। আওয়ামীলীগের বরাবরি ভয় ছিল যে অস্ত্রধারী বামপন্থীরা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে। মুজিব বাহিনী তৈরি হয়েছিল আওয়ামী বিরোধী বামদের ঠেকাতেই। আবার মুজিব বাহিনী তৈরি হওয়ায় মস্কোপন্থী বামরা সিপিবি-ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীদের নিয়ে আলাদা গেরিলা বাহিনী তৈরি করে। তার আগে তারা মূলত বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অংশ হিশাবে যুদ্ধ করে। সেই মুক্তিবাহিনীর সাথেও মুজিব বাহিনীর নানারকম বিরোধীতা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বহু গ্রুপ ছিল, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হতো তাইলে আরো অনেক কিছু হওয়ারই সম্ভাবনা তৈরি হতো।
- পারভেজ আলম

No comments:

Post a Comment