Thursday, April 30, 2015

নিম্ন আদালতে ২৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে: প্রধান বিচারপতি

Source LINK 

প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, নিম্ন আদালতে ২৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না। কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না। তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। তাই প্রশাসনকে বলব আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।


বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্টোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত তাকে দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।


প্রধান বিচারপতি বলেন, “নিম্ন আদালতে ২৮ লাখ মামলা বিচারাধীন। প্রচলিত আইনের এতো মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। তাই আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন করা যায় কি না। হাইকোর্টে সরাসরি যে সকল মামলা এ্যাডমিরালিটি স্যুাট, রিট দাখিল হয় সেখানে মামলা তো এতো সাক্ষ্য গ্রহণ করি না। তাই দেওয়ানি মামলায় সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন এনে বাদী এবং বিবাদী পক্ষ এ্যাভিডেভিটের মাধ্যমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিবেন। এরপর বিচারক তা পর্যালোচনা করে কোন কোন বিষয়ের ওপর জেরার সুযোগ দিবেন তা নির্ধারণ করবেন। তাহলেই সময় বাঁচবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এ ব্যাপারে আমি আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে।”


প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি ফৌজদারি মামলা ২০ বছরেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সাক্ষী না পাওয়া, বিদেশে যাওয়া, পুলিশি সাক্ষী বদলি হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই সকল ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয় ভাবা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিদেশী কিছু সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে।”


তিনি বলেন, “সিভিল মামলায় ইস্যু গঠন এবং ফৌজদারী মামলায় চার্জ গঠনের পূর্বে বাদি ও বিবাদিদের হলফনামা গ্রহন করে সেখান থেকে তর্কিত বিষয় নির্ধারণ করে শুধু সে বিষয়ের ওপর জেরা গ্রহণ করলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।”

এ লক্ষে বিভিন্ন আইন প্রণেতা, আইন বিশারদসহ প্রবীন আইনজীবীদের মতামত গ্রহণ করছেন উল্লেখ করে বলেন, “শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি সেমিনার করে যার যার চিন্তা ভাবনা গ্রহণ করা হবে।” অপরাধী সনাক্তকরণে আমেরিকার সহায়তায় একটি বিশ্বমানের ফরেনসিক লাইব্রেরি স্থাপনের কথা তিনি ঘোষণা করেন।


দেশের সকল আদালতকে ডিজিটালাইজেশন করে ইন্টারনেট ও ওয়াইফাইয়ের আওতায় নিয়ে এসে প্রত্যেক বারে ই-লাইব্রেরি চালু করার কথাও তিনি জানান।


তিনি বলেন, “বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে কারাগার চলে যাচ্ছে। সেখানে কারাগার গেলে সেখান থেকে আসামিদের এ আদালতে হাজির কষ্টসাধ্য হবে এবং সময়ও বেশি লাগবে। সেখানে অনেক জায়গা আছে।” আগামী ২০/৩০ বছর পর আইনজীবীর সংখ্যাধিক্যের কথা বিবেচনা করে পুরান ঢাকা থেকে নিম্ন আদালত কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন তিনি।

তিনি বলেন, সেখানে আদালত হলেই সবার জন্য সুবিধা হবে। সেখানে অনেক জায়গা আছে তাই পরিকল্পিতভাবে সব কিছু করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।


মেট্টোপলিটন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আসকির খানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান, মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবার রহমান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কুমার সাহা, ঢাকা বারের সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকার বিভিন্ন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীবৃন্দ।

No comments:

Post a Comment