Wednesday, April 29, 2015

ভুলে গেছেন দূর্নীতিবাজ এ চোরদের কথা??

Source LINK 
ভুলে গেছেন দূর্নীতিবাজ এ চোরদের কথা??
আওয়ামী লীগের লুটপাটে শেয়ারবাজারে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা
মানুষের জীবনে দুই ধরণের শোক সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়। একটি প্রিয়জন হারানের অন্যটি অর্থ হারানোর। আওয়ামী সরকারের শেয়ার বাজারে নজিরবিহীন লুটপাট কেড়ে নেয় ৩৪ লক্ষ বিনিয়োগকারীর কষ্টার্জিত অর্থ। এটাই প্রথমবার নয় আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ এর শাসনামলে শেয়ার বাজারে লুটপাট ঠিক একইভাবে পথে বসিয়েছিল বিনিয়োগকারীদের। কাকতালীয় ব্যাপার হল আওয়ামী লীগের দু'দফা লুটপাটের উত্থান আর পতন ৫ তারিখে। একটি ১৯৯৬ সালের ৫ নভেম্বর ডিএসইতে একদিনে সর্বোচ্চ ২৩৩ পয়েন্ট সূচক হারানোর ঘটনা অন্যটি ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে সূচক ৮৯১৮ পয়েন্টে এনে বিনিয়োগকারীদের পথে বসানোর উপলক্ষ্য তৈরি।


২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ডিএসইর ব্রোড ইনডেক্স ৯১ পয়েন্ট কমে ৩৫৯০ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইতে এ ইনডেক্স শুরুর পর থেকে এটিই ছিল সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ৪০৫৫ পয়েন্ট দিয়ে ব্রোড ইনডেক্স শুরু হয়। ডিএসইর সাধারণ সূচকও প্রায় ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে । এর আগে ডিএসই সাধারণ সূচক গতবছরের ২ জুন কমে অবস্থান করেছিলো ৩৬১৬ পয়েন্টে। ১ লা আগস্ট সর্বশেষ লেনদেন পর্যন্ত ডিএসই সাধারণ সূচক অবস্থান করেছিল ৩৯১১ পয়েন্টে। অর্থাৎ ৩২ মাসে সূচক হারিয়েছে ৫০০৭ পয়েন্ট।
বড় পুঁজির অধিকাংশ বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন। দীর্ঘ ৩২ মাস দরপতনে অনেক বিনিয়োগকারী মূল পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। যারা প্রতিনিয়ত দেনা আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর এসব বিনিয়োগকারীদের পক্ষে উৎসব অনেকটা আনন্দহীনই কাটে। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় এসব ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে এ ব্যবসার উপর নির্ভরশীল অনেকের ভাগ্যেই গত ২ বছরের ঈদের ন্যায় এবারও নেই কোন ঈদ আনন্দ।
শেয়ারবাজারে প্রায় ৭০ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেন এক কন্যাসন্তানের জনক কাজী লিয়াকত আলী ওরফে যুবরাজ । যুবরাজের আত্মহত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন আসকার দিঘীরপাড় সাইফুদ্দিন রোডের বাসায় গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন দিলদার হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী। শেয়ারবাজারে প্রায় ৩ কোটি টাকার পুঁজি হারান তিনি। কিন্তু তাদের এ আত্মহত্যার পরও শেয়ারবাজারে ধস ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিল না।
পুঁজি হারিয়ে গত দুই বছরে সারাদেশে ১১ বিনিয়োগকারীর আত্মহত্যা করেছেন।শেয়ারবাজারে পুঁজি হারিয়ে এ পর্যন্ত কতজন আত্মহত্যা করেছেন, তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের তথ্যনুযায়ী দুই বছরে ১১ জন বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে টাঙ্গাইলের রনি জামাল,বরিশালের আহমেদ রনিসহ চট্টগ্রামে দিলদার হোসেন ,ঢাকার সূত্রাপুরে যুবরাজ,শান্তিনগরে ১ জন, পল্লবীতে রহমান নামে ১ জন এবং খুলনায় ১ জন। সংগঠনটি জানায়,এদের মধ্যে অনেকের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে এসইসি(বর্তমান বিএসইসি) কার্যালয়ে গিয়ে বিও অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইসময় শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখের মতো। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৪ লাখ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু একের পর এক দরপতনে এখন বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নেমে এসেছে ২৭ লাখে।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ তথ্যে(৩রা আগস্ট পর্যন্ত) মোট বিও (বেনিফিশিয়ারি হিসাবধারীর সংখ্যা হচ্ছে ২৬ লাখ ৮ হাজার ৬৪১ । এর মধ্যে পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬০ জন, নারী ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬০২ জন আর প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবধারী ৯ হাজার ৪৭৯ টি । যার মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসকারী ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৮ জন আর প্রবাসী ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৪ জন। বর্তমানে শেয়ার রয়েছে, এমন ১৬ লাখ ৮৮ হাজার বিও হিসাবের মধ্যে প্রাইমারি শেয়ারধারী প্রায় ১১ লাখ। অবশিষ্ট ৫ লাখ ৮৮ হাজার বিও হিসাবধারী প্রতি মাসে একাধিকবার লেনদেন করেন। আগের বছর শেয়ারবাজারে নিয়মিত লেনদেনকারীর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ লাখ। এক বছরে ব্যবধানে নিয়মিত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ২ লাখের বেশি। ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪টি। ২০০৮ সালে তা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টিতে দাঁড়ায়। ২০০৯ সালের শেষ দিকে এসে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০টিতে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৭। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করায় গত বছর জুলাই মাসে প্রায় ১ লাখ এবং অক্টোবরে প্রায় ৩০ হাজার বিও হিসাব বাতিল করা হয়। তা সত্ত্বেও ২০১০ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ১৫৮ জনে দাঁড়ায়। সে হিসাবে এক বছরে পুঁজিবাজারে নতুন প্রায় ১৯ লাখ ৪২ হাজার বিনিয়োগকারী যুক্ত হন। কিন্তু এরপর ২০১১ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৩৪ লাখ বিনিয়োগকারী যুক্ত ছিল বাজারে। তবে এরপর থেকেই কমতে শুরু করেছে এ সংখ্যা।ধসের পর শেয়ারবাজার সঙ্কটে নিপতিত হলেও পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে ২০১১ সালে কিছু উদ্যোগ থাকলেও ২০১২ সালে তার কোনো কিছুই ছিল না।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে মোট ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রেকর্ড লেনদেন হয়। সূচকও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ৮৯১৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে উঠে আসে। এরপর ১৯ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ভয়াবহ দরপতন ঘটে। একদিনে ৫৫১ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট দরপতন ডিএসইর ইতিহাসে এটাই প্রথম ঘটনা। এর আগে ১২ ডিসেম্বর ডিএসইতে একদিনে সর্বোচ্চ ২৮৪ পয়েন্ট সূচক হ্রাসের ঘটনা ঘটে। এর পর ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হওয়ার ৫০ মিনিটের মাথায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৬৬০ পয়েন্ট পড়ে গেলে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয় ।এটি পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দরপতনের রেকর্ড ছিল ।
শেয়ার বাজারের চিত্র বোঝার একটি উপায় হল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ও আয়ের অনুপাত বের করা। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ও আয়ের (পিই) অনুপাতের গড় ছিল ১৪.৫১। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে এই গড় ২৩.৫৮-এ দাঁড়ায়। ২০০৮ সাল শেষে পিই অনুপাত ১৮.৪২-তে নেমে আসে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির ফলে ২০০৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পিই অনুপাত দাঁড়ায় ২৫.৬৫। ২০১০ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাজার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং পিই অনুপাত ২৯.১৬তে উঠে যায়। সেখান থেকেই বাজারের পতন শুরু হয়। ২০১১ সালের জুন মাসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই দাঁড়ায় ১৬.৫৫। ২০১২ সালের জুন মাস শেষে পিই রেশিও ছিল ১২.৫৩। ২০১৩ সালের জুলাইতে ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী বর্তমান গড় পিই রেশিও ১৪.৩৭।
পুঁজিবাজারে ইতিবাচক গতি ফিরিয়ে আনতে আড়াই বছর ধরে সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ইতিবাচক কোনো ফল আসেনি। মাঝে একটু আশার আলো দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি। সরকারের বিভিন্ন ঘোষণায় প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ ও প্রতিফলন না দেখায় তা হতাশায় রূপ নিয়েছে। যাদের হাতে এখনও শেয়ার আছে তাদের অনেকেই আরও পতনের আশঙ্কায় বিপুল পরিমান লোকসান সত্ত্বেও সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। আবার অনেকের হাতে টাকা থাকলেও তারা এই মুহুর্তে শেয়ার কিনতে আগ্রহী নন। বাজারের পতন কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন সবাই।
বিনিয়োগকারীদের এই নিরব কান্নার শব্দ, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আর্তনাদ আওয়ামী লীগ সরকারের কানে কোনদিন পৌছবে না। সব হারিয়ে তারা অনেকটাই নিশ্চিত যে বর্তমান সরকারের আমলে শেয়ার বাজার ঠিক হবার কোন সম্ভাবনা নেই। শেয়ার বাজারের উন্নতি যে সরকার পরিবর্তন ছাড়া হবেনা সেটা বিনিয়োগকারীদের বুঝতে বাকি নেই।
হায়রে অভাগা জাতি আমরা ! লুটেরা বাহিনী মহাসুখে আর সর্বস্ব হারানো বিনিয়োগকারী ভাইবোনেরা বিচার চেয়েও পায় না। তাদের বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে মহান আল্লাহর দরবারে, দরবেশ আর লোটাসদের বিচার প্রতীক্ষায়।
#বাকশালীদের_না_বলুন #SaveBangladesh

No comments:

Post a Comment