Thursday, February 12, 2015

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির করণীয় সমূহ

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির করণীয় সমূহ :

Source LINK 
আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী পুলিশ যেকোন সময় কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। যদি কেউ এর স্বীকার হয়েই যান তাহলে একটু সতর্ক হউন । আতঙ্কিত না হয়ে মনোবল স্থির রেখে পরিস্থিতি বুঝতে চেস্টা করুন । আর ঘটনা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত তথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন মনোবল হারাবেন না । সব সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবেন। দেখবেন সমাধানটা হয়তোবা পেয়ে যাবেন নিজের বুদ্ধিতে। আপনার যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন ; প্রথমেই গ্রেপ্তার করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন। আপনার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারী পরোয়ানা আছে কিনা তা দেখতে চাইবেন। এটি আপনার সাংবিধানিক অধিকার। এখানে উল্লেখ করা দেরকার যে,গ্রেফতারি পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট হল, কোন ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থিত করার লক্ষ্যে আদালত কর্তৃক জারীকৃত লিখিত আদেশ, যা প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক বা ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চের ক্ষেত্রে বেঞ্চের যেকোন সদস্য কর্তৃক সইকৃত এবং আদালতের সীলমোহরকৃত একটি আদেশনামা। গ্রেফতারের সময় আপনার পূর্ণ পরিচয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার এর নিকট তুলে ধরুন এবং যদি সম্ভব হয় এর সংক্ষিপ্ত কোন পরিচয়পত্র তুলে ধরুন। আত্বপক্ষ সমর্থন করে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা এবং পরিচয় দেওয়ার পরও যদি গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম না হন, তাহলে আপনাকে সম্ভাব্য অনেক বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। যদি গ্রেপ্তার করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন সন্দেহ হয় বা অন্যকোন প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবগত করুন বা নিশ্চিত হবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কি না, তা জানার চেষ্টা করবেন। পুলিশের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে আপনার পরিচয় দেবেন। বেশি জোরাজুরি করলে বলবেন, আমি সবকিছু আদালতে বলব। কারণ নাম-ঠিকানা বাদে কোনো কিছুই পুলিশকে বলতে আপনি বাধ্য নন। আদালতে বলা আপনার অধিকার। এরপর যত দ্রুত সম্ভব যেকোনভাবে নিকটস্থ কোনো আত্বীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনকে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে জানান। যদি কোন কারনে গ্রেফতার এর বিষয়টি উপরোক্ত ব্যাক্তিদেরকে জানাতে না পারেন তাহলে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে সরাসরি বিষয়টি জানাবেন। আর যদি যোগাযোগ হয় তাদের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে মুচলেকাসহ বা মুচলেকা ছাড়া জামিনে আনার জন্য দরখাস্ত দাখিল করবেন অথবা কোর্ট হাজত থেকে ওকালতনামা সংগ্রহপূর্বক আইনজীবী নিযুক্ত করে জামিনে আনার জন্য দরখাস্ত দাখিল করার প্রয়োজনীয় করবেন। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট আদালত থেকেও যদি জামিন দেওয়া না হয়, তবে পর্যায়ক্রমে জেলা দায়রা আদালত এবং পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় আটককৃত ব্যাক্তির যা যা সঙ্গে ছিল তা পুলিশ নিয়ে যায় এবং হাজতে আটক রাখার সময় পুলিশ অফিসার পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন- মোবাইল, টাকাপয়সা, কাগজপত্র ইত্যাদি যা থাকবে তার একটি তালিকা তৈরি করে জমা নিবে। শেষে একটি স্বাক্ষর নিবে। এসময় সতর্কতার সাথে তালিকাটি পরে সবকিছু সত্যতা নিশ্চিত হবার পর স্বাক্ষর করবেন অর্থাৎ সেগুলোর বিবরণ খাতায় লিপিবদ্ধ করার সময় কিছু বাদ দিল কি না অথবা বানোয়াট করে কিছু যোগ করল কিনা সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাতায় স্বাক্ষর করবেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তি পুলিশ অফিসার এর নিকট আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য না (আদালতের অনুমতি নেওয়ার পর বাধ্য ) যদি কোন বিবৃতি দিয়ে তের তবে তা সতর্কতার সাথে পাঠ করে প্রদত্ত বক্তব্য বা ভাষ্য সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হবার পর স্বাক্ষর করবেন। আর কিছু বলে ফেললেও তা সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে গণ্য হবে না। যা কিছু বলার তা আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে বলবেন। গ্রেপ্তারের পর থানা বা অন্য কোথাও যত অত্যাচারই করুক না কেন, কাউকে বিশ্বাস করে কখনই কোনো সাদা কাগজে দস্তখত করবেন না। আর যদি নিতান্তপক্ষে চাপে পড়ে বা নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তা করে ফেলেন। তাহলে তা যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাগজটি উদ্ধারের জন্য শরণাপন্ন হতে হবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবেন। যেহেতু আইনঅনুযায়ী থানায় বা পুলিশি হেফাজতে অত্যাচার করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন না। যদি করা হয়,তাহলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। এবং পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য বা অন্য কোনো কারণে কোনো আঘাত বা নির্যাতন করেন, তাহলে আদালতের মাধ্যমে থানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির অধীনে আশ্রয় নিতে পারেন। পাশাপাশি দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবেন। গ্রেফতার এর কোন পর্যায়ে অসুস্থ হলে আপনি আদালতের মাধ্যমে বা নিজ উদ্যোগে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে এর রিপোর্ট সংগ্রহে রাখবেন এবং চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার এর নাম পরিচয় জেনে রাখবেন যা সাক্ষ্য পর্যায়ে আপনার কাজে লাগবে। যদি আটক হওয়ার পর যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ আদালতে হাজির না করে, সে সেক্ষেত্রেও পরবর্তীতে আদালতে হাজির করার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি অবহিত করা অথবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দরখাস্তের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এবং পাশাপাশি বেআইনিভাবে আটক রাখার কারণে যে মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন, তার জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর যদি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির না করে বা গোপনভাবে আটক রাখে, তাহলে পরিবারের সদস্যদের করণীয় হলো হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হেবিয়াস করপাস এর আওতায় রিট মামলা দায়ের করা। যদি সম্ভব হয় সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করার ব্যাবস্থা করা। রিট জারির পর আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ধৃত ব্যক্তিকে দ্রুত হাজির করার ব্যাপারে আদেশ দেবেন।
লেখক: এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী ( রায়হান)

No comments:

Post a Comment