সিরাজুল আলম খান ( দাদা )
দাদার দ্বিতীয় ধারার রাজনীতির ১৪ দফা
সংবিধানের আমূল পরিবর্তন চান দাদা
সিরাজুল আলম খান মনে করেন, ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার অর্থই হলো পুরো জাতিকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া।তিনি এই সংবিধানের কোন সংশোধনী নয়, বরং আমূল পরিবর্তন চান।তিনি মনে করেন, এই সংবিধান আমাদের আশা-আকাংক্ষা পুরনে অক্ষম,আজকের যুগে এটা একেবারেই অচল।বাংলাদেশে গত ৪০ বছরের রাজনীতি ও প্রশাসনে ঔপনিবেশিক আমলের মন-মানসিকতার প্রাধান্য রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক নেতারা হয়ে গেছেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানী কায়দায় শাসক আর আমলারা হয়ে গেছেন ক্ষমতার মালিক।রাষ্ট্র ও সমাজব্যাবস্থায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি ঔপনিবেশিক আমলের পর্যায়েই রয়ে গেছে।সংবিধানে নারীর অধিকারের কথা থাকলেও শাসনব্যাবস্থায় নারীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ত্ব নেহাত সামান্যই।এখানে বুদ্ধিজীবীরা দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করে বুদ্ধিবৃত্তির জগতকে করেছে অপমানিত।সে কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ চিন্তা ও মনন জগতে গড়ে উঠতে পারেনি মহৎ কোন দৃষ্টিভঙ্গি।সিরাজুল আলম খান আরো বলেন ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা শেষে জনমত যাচাইয়ের পর্যায়ে আমরা সংবিধানকে পুরোপুরি বর্জন না করে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম, যা আজকের যুগের চাহিদা পুরনে ও জনগণের পাহাড় সমান সমস্যা সমাধানে অক্ষম।তিনি বলেন এই সংবিধানের দুর্বলতার সুযোগে গণতান্ত্রিক ধারা বার বার ব্যর্থ হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে এক ব্যাক্তির স্বেচ্ছাচারীতা ও দলীয় শাসন প্রবর্তীত হয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র হয়েছে মুখের বুলি মাত্র।
সে জন্য সিরাজুল আলম খান স্বাধীন দেশের উপযোগী রাষ্ট্র-কাঠামোর প্রয়োজনে জনগণের অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ত্ব প্রতিষ্টার উপযোগী শাসন পদ্ধতির প্রণয়ন, সামগ্রীক জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নৈতিক চেতনা ও নবতর সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধান ও রাষ্ট্র বিষয়ক ১৪ দফার রাজনৈতিক কর্মসূচীর প্রতি দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আপামর জনগণ, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।সিরাজুল আলম খানের ১৪-দফার অন্যতম উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ০১) ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাবস্থা, ০২) নিম্ন কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ সমন্বয়ে দেশের জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট- যেখানে নিম্ন কক্ষে নির্বাচিত দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ৩০০শত সদস্য বিশিষ্ট, আর উচ্চ কক্ষে থাকবে বিভিন্ন শ্রেণী-কর্ম-পেশা-প্রবাসী-নারী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ২০০শত সদস্য ০৩) জাতীয় সংসদের সকল দলের সংসদ সদস্য নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠণ,যেখানে সদস্য প্রত্যাহারের বিধান থাকবে ০৪)বাংলাদেশকে ৭ অথবা ৯টি প্রদেশে বিভক্ত করণ ০৫) সংসদের উচ্চ কক্ষ থেকে নির্বাচিত নির্দলীয় বা অদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকার গঠণের ব্যাবস্থা ০৬) স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠণ ০৭)রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ০৮) উভয় কক্ষ থেকে সদস্য নিয়ে সংসদীয় কমিটি গঠণ ০৯)জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠণ ১০) সাংবিধানিক আদালত গঠণ ১১) ৯০০ সদস্যের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠণ-যেখানে সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত ও পিলিসি গ্রহণে নিশ্চয়তা থাকবে ১২) স্থায়ী বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল গঠণ ১৩) সার্ক এর আওতায় বাংলাদেশ,নেপাল,ভূটান,ভারত(১০টি অঞ্চল),মায়ানমারের দক্ষিণাংশ,চীনের কুনমিং প্রদেশ নিয়ে উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠণ করার প্রস্থাব করেছেন। ১৪) অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে মাইক্রো ক্রেডিট কর্মসূচী ছাড়াও উপ-জেলা ও পৌর শিল্পাঞ্চল গঠণ, প্রতিটি শিল্প এলাকায় ৩০০ কোটি টাকা (প্রত্যেক প্রবাসীর দুইশ হাজার ডলার হিসেবে) বিনিয়োগ করে অনুমান করা যায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব, ২০২০ সাল নাগাদ বছরে প্রতি নাগরিকের আয়ের পরিমাণ দুই লক্ষ টাকা নির্ধারণ টার্গেট ইত্যাদি রয়েছে।
No comments:
Post a Comment