Sunday, October 20, 2019

টেলিভিশন টক’শোর আওয়ামী করণ

টেলিভিশন টক’শোর আওয়ামী করণ

// মোবায়েদুর রহমান
FB Post 18 Oct 2018
আজকাল আমি টেলিভিশনে টক’শো দেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। কারণ, টক’শো গুলোর প্রায় সব কটিই পার্টিজান বা পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে গেছে।
৩০-৩৫টি বাংলাদেশী চ্যানেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পক্ষপাত দুষ্ট হলো ৭১ টিভি। এরা রাত ৮ টায় ৪৫মিনিটের একটি এবং রাত পৌনে ১২টায় ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার আর একটি টক’শো করে। রাত ৮টার টক’শোতে সাধারণত ৪ জন আলোচককে আনা হয়। তার মধ্যে ১জন সরাসরি আওয়ামী লীগার, একজন প্রচ্ছন্ন আওয়ামী লীগার, একজন এরশাদ পন্থী জাতীয় পার্টির এবং আর একজন জাতীয়তাবাদী ঘরানার। জাতীয় পার্টির আলোচক প্রায় সব সময়ই আওয়ামী লীগের সারিন্দা বাজান। সুতরাং দেখা যায় যে, জাতীয়তাবাদী ঘরানার আলোচককে ৩ জন আওয়ামী আলোচককে মোকাবেলা করতে হয়। আমার ভুল হলো। ৩ জন নন, ৪ জন। কারণ, যিনি এ্যাঙ্কর বা সঞ্চালক তিনিও খাঁটি আওয়ামী লীগারের মতই প্রশ্ন করেন। এছাড়া ঐ সঞ্চালক অন্যদেরকে ৮ মিনিট ১০ মিনিট করে সময় দেন। বক্তব্যের মাঝে প্রায়শই interrupt করে থাকেন বা বাধা সৃষ্টি করেন। এমনিতেই বিএনপি পন্থী বা আওয়ামী বিরোধী আলোচক সময় কম পান। তার পরেও তিনি যখন আলোচনা শুরু করেন তখন এক মিনিট যেতে না যেতেই শুরু হয় সঞ্চালকের ইন্টারাপশন এবং এটি বিশেষ মতলব নিয়ে করা হয়।

রাত পৌনে ১২টার টক’শোটি সুনির্দিষ্ট আওয়ামী বৈশিষ্টে চিহ্নিত। এই টক’শোটির সঞ্চালক থাকেন প্রায় সব সময়ই মিথিলা ফারজানা নাম্নী এক মহিলা। মাঝে মাঝে থাকেন ফারজানা রূপা নামের আর এক মহিলা। এর দুজনই মার্কা মারা। একেবারে পাঁড় আওয়ামী লীগার। এরা মাঝে মাঝে ছোট খাটো কৌশল অবলম্বন করলেও তাদের পক্ষপাত দুষ্টতা উৎকট ভাবে ধরা পরে। চ্যানেলটির মালিক মোজাম্মেল বাবু একজন আওয়ামী এ্যাক্টিভিস্ট। ঐ দুই মহিলার আওয়ামী প্রীতির কারণে এখন আর নিরপেক্ষ মানুষরা ৭১ টিভি দেখেন না। তারা বলেন, আরে ঐ চ্যানেলটিতো আসলে বাংলা দৈনিক ‘জনকণ্ঠের’ ইলেক্ট্রনিক সংস্করণ। পৌনে ১২টার অনুষ্ঠানে থাকেন দুই জন আলোচক। আর দুজন অতিথিকে আনা হয় যারা তাদের বাসা থেকেই কথা বলেন। তাদেরকে টিভি স্ক্রিনে দেখা যায়। নিরপেক্ষতার ভান করে একজন নন আওয়ামী লীগার আলোচক আনা হলেও তাকে কথা বলার বা প্রশ্ন করার সুযোগ খুব কমই দেওয়া হয়। অপর আওয়ামী লীগার আলোচককে সব সময় ফ্লোর দেওয়া হয় এবং তিনি ইচ্ছা মত এই সুযোগের অপব্যাবহার করেন। অতিথি আলোচক যদি নন আওয়ামী লীগার হন তাহলে তাকে প্রশ্ন বানে জর্জরিত করা হয়। এবং সারাক্ষণ হেনস্থা করা হয়। অবশ্য ব্যরিষ্টার মঈনুল হোসেন বা রুহুল কবির রিজভীর মতো অতিথি বক্তা এলে এই দুই মহিলা এবং আওয়ামী আলোচককে সিধা এবং টাইট করে ফেলেন।

অন্যান্য চ্যানেলের অধিকাংশই ৭১ টেলিভিশনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তবে সম্ভবত বাণিজ্যিক কারণে তারা ৭১ এর মতো তাদের স্বরূপ ঐ রকম নগ্ন ভাবে উন্মোচন করে না। এগুলোর মধ্যে একটি চ্যানেল রয়েছে একজন অতি ধনাঢ্য ব্যক্তির। এই চ্যানেলটির সঞ্চালক শুধুমাত্র আওয়ামী বান্ধবই নন, তিনি নিজেই এত বেশি কথা বলেন যে আলোচকরা বিশেষ করে আওয়ামী বিরোধী আলোচকরা অষ্ট প্রহর তাদের বক্তব্যে বাধা প্রাপ্ত হন। তার বকর বকর দেখে ঘরের বউরাও বলেন যে, ঐ ভদ্রলোক সঞ্চালকের ভূমিকায় না থেকে আওয়ামী আলোচক হিসাবে থাকলেই পারেন। আর একটি চ্যানেল রয়েছে একজন মন্ত্রীর। এখানকার টক’শোর সঞ্চালক মাঝে মাঝেই বদল হয়। কিন্তু তাদের খাসলত বদল হয় না। এই চ্যানেলটিতে একজন অভিনেত্রীর স্বামীকে প্রায়ই আনা হয়, যিনি মনে হয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগার। অনেকটা সেই More Catholic than the pope. তাকে যখন কথা বলতে দেওয়া হয় তখন আর সঞ্চালক প্রবর সময়ের দিকে তাকান না। আর ঐ আলোচক প্রবর জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া, তারেক রহমান, কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখের বিরুদ্ধে অবিরাম বলগাহীন উক্তি করতে থাকেন। এখানেও সেই একই ফর্মূলা। ২ জন আওয়ামী ক্যাম্পে, আর একজন আওয়ামী বিরোধী ক্যাম্পের। তবে ঐ ২ জনের সাথে যুক্ত হয়ে যান ঐ সঞ্চালক প্রবর।

আর একটি চ্যানেলে টক’শোর সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী। তিনি এর আগে ৭১ টেলিভিশনে ছিলেন। তিনি এখন একটি চ্যানেলের টক’শোর সঞ্চালক, যে চ্যানেলটির বড় শেয়ার হোল্ডার একজন সাংবাদিক এবং ছোট শেয়ার হোল্ডারও আর একজন সাংবাদিক। প্রথম দিকে সঞ্চালনার সময় নবনীতা নিরপেক্ষ হওয়া কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। তাই অনেকে বিবিসির সাথে নামের মিল রাখা ঐ চ্যানেলটির টক’শো দেখায় আগ্রহী হন। কিন্তু বিগত ১০/১৫ দিন হলো দেখা যাচ্ছে যে এই চ্যানেলটিতেও নবনীতা আওয়ামী পন্থী অন্য সঞ্চালকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি কি এটা নিজ রাজনৈতিক বিশ^াসের কারণেই করছেন নাকি কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করছেন সেটি আমরা জানিনা। অতি সম্প্রতি একজন বড় শিল্পপতির চ্যানেলে সন্ধ্যা ৬টায় একটি টক’শো শুরু হয়েছে। এই শিল্পপতির একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকাও রয়েছে। এই চ্যানেলে আলোচ্য সন্ধ্যা ৬টার টক’শোর সঞ্চালন করছেন একজন মহিলা। তার নামটি আমি এই মুহুর্তে স্মরণ করতে পারছি না। এই ১০/১৫ দিন তাকে বেশ চৌকস এবং নিরপেক্ষ মনে হচ্ছে। ফলে কিছু কিছু দর্শক ঐ সঞ্চালকের যেমন ভক্ত হয়েছেন, তেমনি অনেকেই সময় করে ঐ টক’শোটি দেখছেন। এখন নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। কতদিন এই মহিলা নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন সেটি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

তবে দর্শকদের অনেকে টক’শো থেকে মুখ ফিরিয়েছেন আর একটি কারণে। সেটি হলো, টক’শোর মাধ্যমে কয়েকটি মুখ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তারা হলেন, আসিফ নজরুল, নরুল কবির, আসফ উদ্দৌলা, রুমিনা ফারহান, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। আরো আছেন যাদের নাম এই মুহুর্তে মনে আসছে না। আসফ উদ্দৌলা সাহেব সম্ভবত বয়সের ভারে আনত। তাই টক’শোতে আসতে পারেন না। কিন্তু অন্যদের বেলায়? কি হয়েছে যে তারা আসছেন না? তারা কি আসছেন না? নাকি তাদেরকে ডাকা হয় না? এদেরকে নিয়মিত ডাকলে টক’শোর জৌলুষ আরো বাড়তো। উৎকট পক্ষপাত দুষ্টতার জন্য আমার মতো অনেকেই এখন আর নিয়মিত টক’শো দেখেন না। রাত জেগে আওয়ামী পাবলিসিটি দেখার কি দরকার? এমনিতেই তো পত্র পত্রিকা গুলোর ৯০ শতাংশই আওয়ামী পন্থী। আমি ইসলামী এবং জাতীয়তাবাদী মহলের দু চার জনকে বলেছি, আপনারা এসব টক’শোতে যান কেন, যেখানে সঞ্চালকরা আপনাদের কণ্ঠ রোধ করে? ওরা বলেন , কি করবো ভাই, বার বার বাধা দিলেও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কিছুতো বলার সুযোগ পাই্।আমাদের তো আর কোনো চ্যানেল নাই। আমি বলি, সেকথা মানলাম। কিন্তু আপনাদের কোনো চ্যানেল নাই কেন? আ আপনারাও তো বছরের পর বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আওয়ামী সরকার যদি ৩০/৩৫ টি চ্যানেল দিতে পারে তাহলে আপনারা কেন ঐ রকম ২৫/৩০টি চ্যানেল আপনাদের সময় দিলেন না?
মানলাম, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি প্রভৃতি নানা কায়দা কানুন করে বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এনটিভির ব্যাপার কি? তারা আপনাদের কথা বা আপনাদের সংস্কৃতি প্রচার করেনা কেন? বড়লোক হওয়ায় এনটিভির মালিকও কি বদলে গেলেন? নাকি আপনাদের কোনো সাংস্কৃতিক দিক দর্শন নাই? আপনারা কি সুবিধাবাদী? নাকি সাংস্কৃতিক ভাবে দেউলিয়া? এনটিভির ডিগবাজি দেখে ুবড় দুঃখে গাইতে ইচ্ছে করছে ফাতেমা তুজ জোহরার গানঃ-

তুমি বেশ বদলে গেছো
পুরনো সৈকতে আর পানশি ভেড়াও না।
জানি না কোন সাগরের ঝিনুক থেকে
একটিবারও পলক ফেরাও না

যে ঘাটে নোঙর ফেলে নিজের হাতে
দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে দিন কাটাতে।
সে ঘাটের রংমহলায় খিল দিয়ে আজ
পোষ মানানো পাখির ডাকেও একটু তাকাও না।।
 BD Media

No comments:

Post a Comment